লুসাইকন্যা কর্ণফুলীর কোল ঘেষে অবস্থিত বাকলিয়া শহীদ এন.এম.এম.জে. ডিগ্রি কলেজ । যার পূর্ণরূপ: বাকলিয়া শহীদ নূর হোসেন-ডা. মিলন-মোজাম্মেল-জেহাদ ডিগ্রী কলেজ। ’৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বুকে-পিঠে স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তিপাক” লিখে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার রাজপথে মিছিলে অংশগ্রহনকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন নূর হোসেন।
একে একে শহীদ হন ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর তৎকালীন বি.এম.এ.-র যুগ্মসম্পাদক ডা.শামসুল আলম খান মিলন, ১৯৮৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোজাম্মেল এবং ১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর নাজির হোসেন জেহাদ। তাঁদের আত্মত্যাগে সারাদেশের সকল সংগ্রামী ছাত্রসমাজ দলীয় পরিচয় ভুলে একাত্ম হয়ে শপথ নেয় “স্বৈরাচারকে খতম না করে আমরা ঘরে ফিরবো না।” ছাত্রদের এই অগ্নিশপথ সৃষ্টি করল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য উদাহরণ ‘৯০এর গণ অভ্যূত্থান, পতন হল স্বৈরাচারী শাসকের রাজত্ব।’৯০- এর গণ অভ্যূত্থানে শহীদদের স্মৃতিকে বিমূর্ত করে রাখার লক্ষ্যে তৎকালীন মন্ত্রী জনাব আবদুল্লাহ আল নোমান সাহেব অবহেলিত বাকলিয়ায় ১৯৯৫ সালে শহীদদের নামে প্রতিষ্ঠা করেন “বাকলিয়া শহীদ নূর হোসেন-ডা. মিলন মোজাম্মেল-জেহাদ ডিগ্রি কলেজ”। ’৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী গণ-আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশে এটাই একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
১৯৯৫ সাল থেকে এই কলেজটি চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের অনুমোদন লাভ করে ১৯৯৫-৯৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে এখানে পেশাদার ও নিষ্ঠাবান শিক্ষকমন্ডলী পাঠদান ব্যবস্থাপনায় ও তত্তাবধানে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর সকল শাখায় (বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা) শিক্ষাকার্যক্রম চালু হয়। পরবর্তীতে ২০০৪ সাল থকে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে বি.এম.টি (বিজনে ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনলোজি) কোর্স, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক (পাস) কোর্স এবং ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হিসাববিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু রয়েছে। বর্তমানে এ কলেজে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে জাতীয় দক্ষতা মান বেসিক(৩৬০ ঘণ্টা মেয়াদী) শিক্ষাক্রমের আওতায় ‘প্লাম্বিং অ্যান্ড পাইপ ফিটিং, জেনারেল ইলেক্ট্রিশিয়ান, ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশন, কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন ও প্রফিসিয়েনসি ইন ইংলিশ কমিউনিকশন (স্পোকেন ইংলিশ) কোর্স সমূহ চালু হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের নিকট পঠিত বিষয়সমূহ সবিস্তারে ও বাস্তবসম্মত ভাবে পাঠদানের লক্ষ্যে অত্যাধনিক Interactive Board / Multimedia Projector-এর ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করে Audio Visual ব্যবস্থায় পাঠদান করা হয়। সুদক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলীর তত্তাবধানে নিয়মিত অংশগ্রহণমূলক শ্রেণী কার্যক্রম, সুবিশাল খেলার মাঠ, আন্ত:কলেজ সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতা ও ক্রীড়া প্রতিযোগীতা, যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ঝাকজমকপূর্ণভাবে জাতীয় দিবস পালন প্রভৃতি নিয়মিতভাবে পরিচালিত হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সুদৃশ্য ও সুপরিসর লাইব্রেরিতে পাঠগ্রহনর, বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিষয়ভিত্তিক ল্যাব, আইসিটি ল্যাব, ছাত্র-কমনরুম ও ছাত্রীদের জন্য আলাদা কমনরুমসহ ব্যাপক সুযোগসুবিধা রয়েছে। এছাড়া কলেজে দায়িত্বশীল শিক্ষকদের তত্তাবধানে ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহনে বি.এন.সি.সি, রোভার স্কাউট, রেডক্রিসেন্ট ও গালর্স গাইড ইত্যাদি সহপাঠ কার্যক্রমের মাধ্যমে বহুমুখী কর্মতপরতাকেও উৎসাহিত করা হয়। শিক্ষার মানোন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীরা যাতে ভবিষ্যৎ জীবনে সফলতার শীর্ষে উঠতে পারে এবং মহৎ মানুষ হয়ে দেশ ও জাতির গেদ্বরবে পরিণত হতে পারে সেই লক্ষ্যেই এই কলেজের সকল কার্যক্রম বিন্যস্ত করা হয়েছে।
বর্তমান সরকারের তত্তাবধানে ও সহযোগিতায় কলেজে সুবিশাল একাডেমিক বিল্ডিং স্থাপন, অত্যাধুনিক আইসিটি ল্যাব স্থাপনে শিক্ষার্থীদের আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষায় যুগান্তকারী সুযোগ সৃষ্টি করেছে। কলেজ গভর্নিং বডি’র সম্মানিত সভাপতি ও সদস্যদের তত্তাবধানে বর্তমানে কলেজের অবকাঠামোগত বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পাদিত হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে কলেজটি একটি সুদৃশ্য শিক্ষাবান্ধব ক্যাম্পাসে পরিণত হয়েছে। গভর্নিং বডি, অধ্যক্ষ, অধ্যাপকমন্ডলী, ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকবৃন্দের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এভাবে শিক্ষা সহায়ক বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বাকলিয়া শহীদ এন.এম.এম.জে. ডিগ্রি কলেজ অদূর ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম তথা দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে গড়ে উঠবে এ আমাদের বিশ্বাস।
বি:দ্র- শহীদ মোজাম্মেল এর ছবি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।